রংপুর প্রতিনিধিঃ বাজারে অন্যান্য দোকানির দোকান যখন বিভিন্ন পণ্যে ঠাসা। তখন তার দোকান পুরোটা ফাঁকা। কেবল দোকানের মেঝে ভর্তি এলোমেলো ছড়ানো শত শত মোবাইল ফোন। আর সামনে আয়েশি ভঙ্গিতে বসা সঞ্জয় কুন্ডু (৩৫)।
কোনো বিকিকিনি নেই তার দোকানে। তবে ক্রেতারা আসছেন, যাচ্ছেন। ভিড়-বাট্টাও কম নয়।
কৌতুহল নিয়ে এগিয়ে গিয়ে জানা গেলো, সঞ্জয় মূলত বিক্রি করেন বৈদ্যুতিক চার্জ। মোবাইল ফোনে চার্জ দেওয়াই তার ব্যবসা।
এ ব্যবসা করেই দিন বদলেছে সঞ্জয় কুন্ডুর। মোবাইল ফোনে চার্জ দেওয়ার এ অভিনব ব্যবসার চমকপ্রদ গল্প শোনালেন সঞ্জয় নিজেই।
পৌরশহরের ডাঙ্গাপাড়া মহল্লার বাসিন্দা তারা। ছোট বেলায় বাবার মৃত্যুর পর পরিবারে উপার্জনক্ষম কেউ ছিলেন না। মামাদের সংসারে থেকে কষ্ট করে এসএসসি পাশের পর বদরগঞ্জ উপজেলার নামকরা এক মিষ্টির দোকানে ম্যানেজারের চাকরি পান।
কিছুদিন পর সে চাকরি ছেড়ে পৌর শহরের ডিগ্রি কলেজ রেলগেট এলাকায় ৩০ হাজার টাকা জামানত দিয়ে গালামালের দোকান নেন। কিন্তু বিধিবাম! বাকি পড়ে সে ব্যবসাও অল্পদিনেই লাটে ওঠার উপক্রম হয়।
সংসার কিভাবে চলবে এ চিন্তায় তখন দিশেহারা তিনি। সে সময় তার দোকানে বিভিন্ন গ্রামের লোকজন বাজারের ব্যাগ রেখে যেতেন। কেউ কেউ মাঝে-মধ্যে নিজেদের মোবাইল ফোন চার্জ দিয়ে দিতে অনুরোধ করতেন।
তখন, একদিন মোবাইল ফোন চার্জ দেওয়ার ব্যবসা মনে আসে তার। সেই থেকে শুরু। এখন দিনে গড়ে ২৫০ থেকে ৩০০ মোবাইল ফোন চার্জ দেন তিনি। প্রতিটি মোবাইল ফোন চার্জের জন্য নেন ৫ টাকা করে। এভাবে এখন তার মাসিক আয় ৩৫-৪০ হাজার টাকার মতো।
এ আয় দিয়েই বাড়ি পাকাকরণ, সংসার নির্বাহ ও সন্তানদের লেখাপড়া সব করাচ্ছেন বলে সঞ্জয় জানান।
তিনি বলেন, ‘গালামালের দোকান দিয়ে আমি যখন লোকসানের পথে, ওই সময় যদি এই মোবাইল চার্জের ব্যবসা শুরু না করি তাহলে আমাকে আজ পথে বসতে হতো।’